ভবিষ্যত পরিকল্পনা
পরিবেশ বিষয়ক বর্তমান সরকারের ৯ বছরের অর্জন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা
বর্তমান পরিবেশ বান্ধব সরকার টেকসই উন্নয়ন (Sustainanble Development) এর লক্ষ্যে দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মান উন্নয়ন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও দূষণ হ্রাসকরণ কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে। প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রকে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে 18(ক) অনুচ্ছেদ অন্তর্ভূক্তির পাশাপাশি পরিবেশ সংক্রান্ত নীতি, আইন ও বিধিসমূহ যুগোপযোগী করেছে। সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি প্রতিপালন করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সকল সেক্টরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মকান্ডে পরিবেশকে Mainstreaming করার উদ্যোগ গ্রহণ করে 2015 পরবর্তী সময়ে SDGs ঘোষণা করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, জীববৈচিত্রের নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সরকার ইতোমধ্যে দেশে 13 টি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologycal Critical Areas-ECA) ঘোষণা করে সেগুলোর বিশেষ যত্ন নিচ্ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতীয় কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশই প্রথম Bangladesh Climate Change Strategy and Action Plan (BCCSAP), 2009 প্রণয়ন করেছে এবং এ কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল (Bangladesh Climate Change Trust Fund, BCCTF) গঠন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিগ্রস্ত দেশসমুহের মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম নিজস্ব উৎস রাজস্ব খাত থেকে এই তহবিল গঠন করেছে।
সরকার কর্তৃক পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মান উন্নয়ন এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমনে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার “জাতীয় পরিবেশ পদক” প্রদান করা হচ্ছে। সরকার পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন)আইন -২০১০, পরিবেশ আদালত আইন-২০১০, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র আইন-২০১৭, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ সহ বিভিন্ন বিধিমালা প্রণয়ন করেছেন। প্রসঙ্গত বিশেষভাবে উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ে উল্লিখিত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রজ্ঞা, একনিষ্ঠতা, সুদূরপ্রসারী দিকনির্দেশনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সবোΠচ্চ পুরষ্কার, “Champions of the Earth” অর্জন করেছেন।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত কার্যক্রম
- উপকূলীয় ও জলাভূমির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Critical Area, ECA)-এর মধ্যে কক্সবাজার-টেকনাফ পেনিনসুলা, সোনাদিয়া দ্বীপ ও হাকালুকি হাওর ইসিএতে ‘কমিউনিটি বেইজড অ্যাডাপটেশন ইন দ্য ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়াস থ্রু বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন অ্যান্ড সোসাল প্রটেকশন প্রকল্প (সিবিএ-ইসিএ প্রকল্প)’ বাস্তবায়ন;
- জীববৈচিত্র্য সনদের আওতায় গৃহীত কৌশলগত পরিকল্পনা ২০১১-২০২০ এর সাথে বাংলাদেশের জাতীয় জীববৈচিত্র্য কর্মকৌশলের সামঞ্জস্যপূর্ণকরণ এবং হালনাগাদ করে প্রণয়নের লক্ষ্যে ‘আপডেটিং অ্যান্ড মেইনস্ট্রিমিং ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রকল্প বাস্তবায়ন;
- জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কনভেনশন (UNFCCC) এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশসূহের স্বার্থ রক্ষায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের দৃঢ় ভূমিকা পালন;
- UNFCCC-এর আওতায় তৃতীয় ন্যাশনাল কমিউনিকেশন প্রণয়নের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপন্নতা ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিরূপণ, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনকে অঙ্গীভূত করার বিষয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ, পরিবেশবান্ধব কম নিঃসরণযোগ্য উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ন, দেশের সামগ্রিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ নির্ণয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ;
- জাতিসংঘ মরুময়তা প্রতিরোধ কনভেনশনের আওতায় ধারাবাহিক জাতীয় প্রতিবেদন প্রণয়নের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খরা, মরুময়তা ও ভূমির অবক্ষয় সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও হালনাগাদকরণ এবং এ-সংক্রান্ত National Action Programme (NAP) প্রণয়ন;
- মন্ট্রিল প্রটোকলের শর্তানুযায়ী বাংলাদেশে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী সিএফসি-এর ব্যবহার পর্যায়ক্রমিক নিয়ন্ত্রণ করে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হয়েছে এবং বর্তমানে ব্যবহৃত বিকল্প দ্রব্যসমূহের ফেজ আউটের কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে;
- শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরিসহ উপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন;
- স্বল্প কার্বন নিঃসরণকারী জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা হস্তান্তর ও আহরণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়ন অর্জনে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
উন্নয়নের নিরবচ্ছিন্ন ধারা বজায় রাখতে পরিবেশ দূষণ ও অবক্ষয় যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি নূতন নূতন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমেও আসছে বহুমাত্রিকতা। টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি। পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার প্রধান কয়েকটি হল:
- উন্নয়নের সকল ধারায় পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয় মূলধারায় আনা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিত করা;
- ২০১৮ সালের মধ্যে প্রযোজ্য সকল শিল্পকারখানায় এবং অন্যান্য প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইটিপি ও এসটিপি এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সুবিধা স্থাপন ও পরিচালনা নিশ্চিত করা;
- সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে সকল বিভাগ ও জেলায় পর্যায়ক্রমে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন ও জনবল বৃদ্ধি করা;
- শতভাগ শিল্পকারখানাকে পরিবেশ আইন পরিপালনের আওতায় আনা এবং পর্যায়ক্রমে Zero Discharge-এর লক্ষ্য অর্জন করা;
- সকল প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কার্যকর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করা;
- সীমান্তবর্তী বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রান্সবাউন্ডারি এয়ার অ্যান্ড ওয়াটার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশন স্থাপনপূর্বক নিরবচ্ছিন্নভাবে বায়ু ও পানির মান পরিবীক্ষণ করা;
- পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা;
- দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারনকল্পে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে UNFCCC-এর আওতায় National Adaptation Plan (NAP) প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা প্রদান;
- জনমানুষের সচেতনতা ও প্রচার মাধ্যমের পরিবেশ সহায়ক ভূমিকা কাজে লাগিয়ে সবাইকে পরিবেশবান্ধব কাজে সম্পৃক্ত করা;
পরিবেশ দূষণের পরিণাম স্বাস্থ্যহানি, মৃত্যু, প্রতিবেশের উৎপাদনশীলতা হ্রাস, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ইত্যাদি সম্বন্ধে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করা।